Sunday, 15 August 2010

ইচ্ছে পাখির স্বপ্ন

লুনা শীরিন
[উঁচু-নীচু পথে-হাঁটা জীবন আমাদের- বাঁক, খাদ আর সমতলের কোণে কোণে তবু ফুটে থাকে প্রত্যাশার ফুল! বার বার রঙধনু এসে রাঙিয়ে দিয়ে যায় মন, ইচ্ছের পাখিরা স্বপ্নের ডানা মেলে পাড়ি দেয় সুনীল আকাশ! পথে পথে কুড়িয়ে পাওয়া জীবনের এইসব ছোট ছোট টুকরো গল্পও ওড়াওড়ি করে হাওয়ায়]



সময় সময় আমি আমার পুরোন লেখা নিয়ে বসি, নিজেরই লেখাগুলো উল্টেপাল্টে দেখি, ভাবি ফেলে আসা ভাবনাগুলো, ভাবতে ভাবতে কখনো হারিয়ে যাই, কি চেয়েছিলাম এই জীবনে? কতটুকু পথ এলাম আমি? এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে লন্ডনে বসবাসরত আমার প্রিয় মানুষ ফিলসফির প্রফেসর শেখ আব্দুল ওয়াহাব নানার কথা। নানা একবার আমাকে চিঠিতে লিখেছিলেন ”দাদু প্রতিটি মানুষেরই জীবনে চলার পথে একবার থমকে দাড়ানো দরকার, ভাবা দরকার সে ঠিক পথে যাচ্ছে কিনা, অনেকটা জাহাজের দিকনির্দেশনার মতো, তাহলে বোঝা যায় যে পথে যাবার কথা সে পথেই আমরা যাচ্ছি কিনা”। মনে পড়ে চিঠিটা নানা লিখেছিলেন ২০০৫ সালে, আমি বিদেশে আসার ঠিক দুইমাস পড়ে। আজকে পুরোন লেখা পড়তে গিয়ে নানার উপরে একটা গল্প পড়তে গিয়েই মনটা বিভ্রান্ত হয়ে উঠলো। আসলেই কি চেয়েছিলাম আমি? কতটুকু পথ এলাম? বিষন্ন্ বিকেল, ছুটির দিনের শ্রান্ত বিকেল, বাইরে তেজ কমে আসা বিকেলের আলো। ছোটবেলায় এমন অনেক বিকেল কেটেছে রংপুরে, খেলার মাঠে,পাড়ার মেয়েদের সাথে ছি-বুড়ি আর গোল্লাছুট খেলতাম আমি, সারা দুপুর উত্তেজনায় কাটতো, মা কখন পারমিশন দেবেন মাঠে যাবার । এরপর ঢাকায় ছাদকেন্দ্রিক জীবন, যদিও ধানমন্ডি স্কুলের খোলা মাঠে বিকেলে র্গাল-গাইড আর রেডক্রস করে কেটে যেতো অনেকটা সময়। এরপর স্কুলে থাকতেই সাভারে পিএটিসিতে চলে আসি আমরা। সারা ক্যাম্পাস জুড়ে একটা মেয়েদের দল হেটে বেড়াতাম, সেকি জীবন, নতুন গড়ে উঠা কলোনীর ঝকঝকে বাড়ি, ক্যাম্পাস জুড়ে বাঁকানো লেক নাইন/টেন/ইলেভেন/টুয়েলভ কি অসম্ভব সুন্দও বিকেলগুলো, আজো মনে হয় জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন বুঝি বয়ে গেছে। শুরু হলো জাহাঙ্গীরনগরের জীবন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন, হল জীবন, কারো কাছে পারমিশন নিতে হবে না, নিজেই রাজা। প্রান্তিক গেট, ক্যাফে, আর্টস বিল্ডিং, বিশ মাইল, ডেইরি ফার্ম- এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত চষে বেড়িয়েছি, হৈ হৈ করে কেটেছে প্রথম দুবছর। কিন্তু কখন যেন মাথায় ঢুকে গেল এই স্বাধীন জীবনকে ধরে রাখতে হলে আরো কিছু কষ্ট করা দরকার, ক্রমেই সেই চিন্তা দানা বাধতে থাকে মনের ভিতরে। পরবর্তিতে বিয়ে, সংসার, এনজিওর চাকরি, জেন্ডার ট্রেনিং, সন্তান, বিদেশ আসা, নানানা পথ জীবনের কিন্তু মুক্তি কি মিলেছে? ক্রমাগত মাথার ভিতরে ঘুরেছে নিজেকে বাচঁতে শিখতে হবে। হয়েছে কি সেই স্বপ্নপুরণ? মানুষ নাকি তার স্বপ্নের সমান বড়, তবে আর কতদিন স্বপ্ন দেখবো? আজো টরোন্টো শহরে ছুটির দিনের বিকেল, সারা সপ্তাহের কর্মব্যস্ততার পরে দুদিন ছুটি মেলে। কত কত মানুষের মুখ, জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখি, বলা উচিত ব্যক্তি জীবনকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়। নিজের জীবনেই তো পর্বতসমান ঘটনায় ভরা, কোথা থেকে শুরু করেছিলাম, শেষ কেমন হবে? বিচলিত লাগে, শুনেছি মানুষের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ নিজের সাথে, সেই যুদ্ধই কি চলছে এখনো? ভাবনার জাল ছিন্ন হয়ে যায়। শান্ত-নীরব বাড়িতে পাশের ঘর থেকে ছেলে এসে গলা পেঁচিয়ে ধরে, ”মাম হোয়াই আর ইউ ক্রাইয়িং” আর লুকাতে পারি না,সত্যিই কি চেয়েছিলাম? সেই জাহাজের দিক নির্দেশনার মতো পথ কি ঠিক আছে এখনো? চলছি আমি?
লুনা শীরিন
০৮ জুলাই,২০১০

No comments:

Post a Comment

Find us on Facebook